সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

টাঙ্গাইলে ২২ খালের  মধ্যে ৫ টির অস্তিত্বহীন  

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলে ২২ খালের  মধ্যে ৫ টির অস্তিত্বহীন  

টাঙ্গাইল শহরের ২৭টি খালের মধ্যে পাঁচটি লুটেদের দৌরাত্ম্যে ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা ২২টি খাল লুটের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। 

জানা যায়, টাঙ্গাইল এক সময় নদীপথে বাণিজ্যনির্ভর শহর ছিল। সম্ভবত ছোট-বড় জাহাজ, মালামাল পরিবহনের জন্য বড় বড় নৌকা ও মানুষের ব্যবহারে মিষ্টি পানির সংরক্ষণে টাঙ্গাইলের খালগুলো খনন করা হয়।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড শহরে কতগুলো খাল রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। তবে কাগজ-কলমে খালের দাগ-খতিয়ান নম্বর, এসএ, সিএস, আরওআর ও বিএস নম্বর পাওয়া গেলেও বাস্তবে খালগুলোর অস্তিত্ব ক্ষীণ। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র ঘেটে টাঙ্গাইল শহরের আওতায় ২৭টি খালের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে পাঁচটি খাল প্রভাবশালী লুটেদের দৌরাত্ম্যে ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। 

বাকি ২২টি খাল প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা নানা কৌশলে ক্রমান্বয়ে দখল করছে। খাল দখল করে নির্মাণ করছে বড় বড় মার্কেট ও বাসাবাড়ি। মার্কেট ও বাসাবাড়ির পয়নিষ্কাশনের পাইপের সংযোগ এসব খালের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় খাল থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব খাল উদ্ধার করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি শহরবাসীর।

সরেজমিনে জানা যায়- শহরের সাবালিয়া খালটি টাঙ্গাইল শহরের ময়মনসিংহ সড়কের বায়তুন নূর জামে মসজিদের পাশ থেকে সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া হয়ে সাবালিয়া বটতলা কালভার্ট হয়ে বৈরান নদীতে সংযোগ হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী মহল রাতারাতি ইটের দেয়াল নির্মাণ করে। এর কয়েক বছর পর সেই ইটের দেয়াল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এভাবেই বহুতল ভবন নির্মাণ করে সাবালিয়া খালের চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, খালের উপর সীমানা প্রাচীর, আধা-পাকা ঘর, টিনশেড ঘর ও পরে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। 

এদিকে সরকারি কুমুদিনী কলেজ গেট-সুরুজ সড়কে সাবালিয়া বটতলা এলাকায় খালের উপর কালভার্ট থাকলেও দক্ষিণ পাশে খাল চেনার কোনো উপায় নেই। যে যার মতো পেরেছে খালের জায়গা দখল করে নিয়েছে। 

 পৌরসভার কচুয়াডাঙ্গা এলাকার রহিম মিয়া, বেড়াবুচনার হাসেম মিয়া, পারদিঘুলীয়ার আজগর আলী, বিশ্বাস বেতকার নাজমুল মিয়াসহ অনেকেই জানান, কচুয়া ডাঙ্গা-বেড়াবুচা খাল দিয়ে প্রায় ৪০ বছর আগে ধান-পাটের নৌকা নিয়ে তারা করটিয়া হাটে যেতেন। সেই খাল ভরাট হওয়ায় তার কোনো চিহ্ন নেই। কয়েক যুগ আগে নৌকা যোগে লৌহজং নদী হয়ে শ্যামা খাল দিয়ে শহরের নিরালা মোড়ে ব্যবসায়ীরা আসতেন। সেই খালটি এখন ড্রেনে পরিণত হয়েছে।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইলের ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, টাঙ্গাইল শহরের ২৭টি খালের বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। নদী, খাল, বিল ও জলাশয় উদ্ধারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া হাইকোর্টেরও দিকনির্দেশনা রয়েছে।

টাঙ্গাইল পৌরমেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, খালগুলোর বিষয়ে সকল পক্ষের সমন্বয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া খাল যেমন জনসাধারণের প্রয়োজন তেমনই রাস্তাগুলোও জনস্বার্থে নির্মাণ করা হয়। পৌরসভা কোন খালের উপর রাস্তা নির্মাণ করেছে এমনটা তার জানা নেই, ড্রেন খাল ঘেষে নির্মাণ হয়ে থাকতে পারে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মির্জাপুর অংশের ২২ কিলোমিটার এলাকায় নদী পুনর্খনন ও নদী তীর সংরক্ষণে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া নদীর টাঙ্গাইল শহরের অংশে নদীদখল ও দূষণমুক্ত করতে কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শহরের খালগুলো পুনরুদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়সারুল ইসলাম জানান, দখলকৃত খালগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উদ্ধার করা হবে। শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদী দখল-দুষণমুক্ত করতে ইতোমধ্যে ডিপিপি করা হয়েছে। ওই ডিপিপি সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। লৌহজং নদীর দখল-দুষণমুক্ত করার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ খুব দ্রুত দৃশ্যমান হবে। একই সঙ্গে খাল পুনরুদ্ধারেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টিএইচ